"ইসলামের অগ্রগতি, নারীর অভিশাপ"
মাত্র ৪০-৪৫ বছর আগে মিনিস্কার্ট পরে রাস্তায় প্রকাশ্যে ঘুরতেন আফগান নারী। বাসে পুরুষের সঙ্গে পাশাপাশি বসতেন, গান-বাজনা ও সঙ্গীত চর্চাও করতেন। ইউরোপ ও আমেরিকার মতোই তখন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পাড়তেন মেয়েরা। নারীরা চিকিৎসা পেশা গ্রহণ করতে পারতেন, নারী-পুরুষ সকলে মুভি থিয়েটার, ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস কিংবা শহরতলীর টেক্সটাইল মিলগুলোতে একত্রে চলাফেরা করতে পারতেন। আইন ও শাসনের ঐতিহ্য ছিলো এবং একটি সরকার ছিলো।
সেই আফগানিস্তানে এখন উল্টো চিত্র। মেয়েরা চাকরি করতে ও স্কুল-কলেজে পড়তে গেলে তালেবানরা তাদের হত্যা করে। নারী শিক্ষা সেখানেে এক প্রকার নিষিদ্ধ। সঙ্গীত চর্চা তো এখন কেবলই স্মৃতি! আফগানিস্তানে এখন পৃথিবীর মধ্যে নারী নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি। নারীরা গৃহবন্দী। ৮৫ শতাংশ নারীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাদের প্রত্যাশা খুবই কম। নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে। যুদ্ধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আফগানিস্তানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে ১৯৭৩ সালে। শেষ রাজা ছিলেন মোহাম্মদ জহির শাহ। এক অভ্যুত্থানে রাজা জহির শাহকে পরাজিত করে ক্ষমতার দখল নেয় দাউদ খান। দাউদ খান ক্ষমতা নেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সমর্থন হারায়। সত্তর দশকের শেষের দিকে দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটিতে হস্তক্ষেপ করে। তখন ৮০ হাজার সৈন্য পাঠিয়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ থামাতে চেষ্টা করে রাশিয়া। এক দশক ধরে আফগানিস্তানে গেরিলা যুদ্ধ চালায় ইসলামিক জেহাদিরা। টানা ১০ বছর যুদ্ধের পর সোভিয়েত বাহিনী ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। কিন্ত এ যুদ্ধের কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে। ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়।
সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর নতুন করে বিভিন্ন জেহাদি দলের মধ্যে ক্ষমতা দখল নিয়ে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। এ সুযোগে ১৯৯৬ সালে ইসলামিক জেহাদি তালেবানরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পরই দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। রক্ষণশীল ইসলামিক শাসন চাপিয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতির সাথে সংস্কৃতিকেও ধ্বংস করে দেয় তালেবান শাসকরা।
তালেবানরা আফগান নারীদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণ ও চাকরি করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় বর্বর পুরুষতান্ত্রিক শাসন। ২০১৩ সালে নারী নির্যাতনে শীর্ষ স্থান দখল করে আফগানিস্তান। তালেবান শাসনের সময় ইসলামিক কট্টরপন্থা অবলম্বন করে নারীকে গৃহবন্দী করে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মধ্য এশিয়ার প্যারিস খ্যাত আফগানিস্তান এগিয়ে যেতে থাকে অন্ধকারের দিকে।
তালেবান প্রধান মোল্লা ওমর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদাকে মদদ দিতে থাকে। আফগানিস্তান থেকে আল কায়েদার জেহাদিরা টুইন টাওয়ার হামলাসহ আরো কয়েকটি হামলা চালায়। এর প্রেক্ষিতে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে ২০০১ সালে সৈন্য পাঠায়। নতুন আরেকটি যুদ্ধের মধ্যে পড়ে দেশটি। মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে আলকায়েদা প্রধান লাদেনকে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা শাসক হিসেবে হামিদ কারজাইকে নির্বাচিত করে।
২০০১ সালের পর গণতান্ত্রিক শাসন শুরু হলেও দেশটিতে যে ইসলামিক চরম পন্থা জেঁকে বসে, তা থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি দেশটির জনগণ। তবে ‘তালেবান’ শাসন অবসানের পর শিক্ষা, নারী অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও দেশটিতে এখন অন্তহীন সমস্যা, আবার জাঁকিয়ে বসছে ISIS জেহাদিরা। আমাদের পাশের দেশ বাংলাদেশ, খুব দ্রুত এই ইসলামী কট্টরপন্থার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
আফগান নারীদের সোনালি অতীত ও বর্তমানের কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো।
No comments:
Post a Comment